ওয়াল অব বাইসাইকেল
বাইসাইকেল বা দ্বি-চক্রযান- পৃথিবীর সবচেয়ে জনপ্রিয় ও প্রাচীন বাহনগুলোর অন্যতম। এক হিসেব অনুযায়ী ২০০৩ সাল পর্যন্ত সারা বিশ্বে একশ কোটিরও বেশি সাইকেল তৈরি করা হয়েছে। উনিশ শতকে উদ্ভাবিত এ অমূল্য দ্বি-চক্রযানের চাকা গ্রাম-গঞ্জ-শহরতলী সব জায়গাতেই ঘুরছে। বর্তমানে ট্রাফিক জ্যামপূর্ণ শহরের সফল একটি বাহন বাইসাইকেল। জার্মানি সাইকেল প্রস্তুতের জন্য সেরা দেশ হিসেবে বিখ্যাত। নামিদামি সব সাইকেল ব্র্যান্ডের জন্য বিশ্বব্যাপী নাম আছে দেশটির। তাই জার্মানির বিভিন্ন শহরের অলিগলিতে সাইকেল বিক্রির দোকানের আধিক্য দেখা যায়। তবে পিটার হরস্টম্যান নামের সাইকেল ব্যবসায়ীর দোকানটি দেখলে সবার নজর কাড়বে নিশ্চিত। বিপণন কেন্দ্রটি জার্মানির বার্লিন থেকে প্রায় ২০ কিলোমিটার দূরের অল্টল্যান্ডবার্গে অবস্থিত। দোকানটি দেখলে প্রথমে কেউ বুঝবেই না এটা কোনো সাইকেল বিপণন কেন্দ্র। কারণ এটি হল অদ্ভুত বৈশিষ্ট্যের চোখ ধাঁধানো এক বাইসাইকেল শপ। প্রথাগত কোনো শোরুমের মতো নয় বাইসাইকেল শপটি। পুরো ভবনটিই শোরুম। তবে ভেতরে নয় বাইরে। এটাই পিটারের বিক্রয়কেন্দ্রের নতুনত্ব। ভবনের বাইরের দেয়াল জুড়ে ঝোলানো অবস্থায় সাজানো রয়েছে একশরও বেশি সাইকেল। কেউ প্রথমে এটিকে দেখে কোনো শিল্পশালা বলে ভুল করতে পারেন। কিন্তু আসলে এটা স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যের স্থানীয় একটি বাইসাইকেল শপ। বাহ্যিক দৃষ্টিতে অনেকটা হাস্যরসাত্মক কাণ্ড মনে হওয়া এ উদ্ভাবনী বুদ্ধিই পিটারকে ব্যবসায় সফলতা দেখিয়েছে। প্রথমে পিটার ৪০টি পুরনো সাইকেল কেনেন। এক বিক্রেতা তাকে জিজ্ঞেস করেন, এতগুলো পুরোনো সাইকেল দিয়ে তিনি কী করবেন? তখন তিনি উত্তর দিয়েছিলেন, ‘এগুলো আমি দেয়ালে ঝোলাব।’
সেই বিক্রেতা এ উত্তরে পিটারকে পাগল ছাড়া আর কিছুই ভাবেননি। কিন্তু একই কথা পিটার তার ব্যবসায়িক অংশীদার ক্রিস্টিয়ানকে বললে বিচক্ষণ ক্রিস্টিয়ান সঙ্গে সঙ্গে পরিকল্পনাটি লুফে নেন। দুজন মিলে ৪০টি সাইকেল দেয়ালে ঝুলিয়ে ফেলেন। পিটারের চিন্তাশক্তিকে বাহ্বা দিয়ে ক্রিশ্চিয়ান বলেন, ‘এটাই হবে। আমাদের মার্কেটিংয়ের প্রধান অস্ত্র।’ বর্তমানে পিটার ও ক্রিশ্চিয়ানের শোরুম দেয়ালে সাইকেলের সংখ্যা ৪০টি থেকে বেড়ে ১২০টিতে দাঁড়িয়েছে। এ অদ্ভুত পরিকল্পনায় মার্কেটিংয়ের জন্য তাদের লাভ বেড়ে যায় ৪০ শতাংশ। এমনকী যখন পুরো জার্মানির সাইকেল মার্কেটে ২২ শতাংশ বিক্রি কমে যায় তখনও তাদের বিক্রি কমেনি শুধু উদ্ভাবনী বিজ্ঞাপনী আইডিয়ার কারণে। এখনও হট কেকের মতো সাইকেল বিক্রি হচ্ছে পিটারের দেয়াল শোরুম থেকে। পুরো জার্মানিতে এখন বিপণন কেন্দ্রটি ‘ওয়াল অব বাইসাইকেল’ নামে প্রসিদ্ধ।