মদনপুরে ডাকাতির প্রস্তুতিকালে শীর্ষ সন্ত্রাসী পিচ্চি দেলু ও ছাত্রলীগের কলংকৃত সভাপতি শাকিল মেম্বারসহ আরও ১ জন গ্রেপ্তার, অস্ত্র উদ্ধার

নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি:-
বন্দরে ডাকাতি প্রস্তুতিকালে সিদ্দিরগঞ্জের শীর্ষ সন্ত্রাসী পিচ্চি দেলু সহ দুই সহযোগীকে গ্রেপ্তার করেছে ডিবি পুলিশ। বৃহস্পতিবার রাতে উপজেলার মদনপুর এলাকা থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় ডাকাতি কাজে ব্যবহৃত একটি প্রাইভেটকার ও ৪ টি দেশীয় দাড়ালো অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। গ্রেপ্তারকৃত দোলেয়ার হোসেন ওরফে পিচ্চি দেলু (৩৫) সিদ্দিরগঞ্জ পাঠানতলী এলাকার শাহজাহান ড্রাইভারের ছেলে। অন্যদিকে মদনপুর ইউনিয়ন পরিষদের ১ নং ওয়ার্ডের সাবেক মেম্বার ও ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি মো. শাকিল (৩৪) ও একই এলাকার মৃত জসিমউদ্দিন ভূঁইয়ার ছেলে শাহজালাল ডাকাতির প্রস্তুতিকালে তাদেরকে গ্রেফতার করা হয়। এ সময়, সন্ত্রাসী দেলুর ব্যাগে রক্ষিত লোহার ১৬ইঞ্চি একটি চাঁপাতি, ১৮ ইঞ্চি একটি ছোড়া,ও নগদ ১৭শ টাকা উদ্ধার করা হয়। অন্যদিকে, ১৭ইঞ্চি একটি ছোড়া ও নগদ ১৭হাজার টাকা, জেলা আওয়ামী লীগ নেতা আরজু রহমান ভূঁইয়ার ভাতিজা মাদকসেবী শাকিল মেম্বারের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয়। ডাকাত দলের সহযোগী শাহজালালের কাছ থেকে ১টি ১৭ ইঞ্চি ছোড়া উদ্ধার করা হয়।

নারায়ণগঞ্জ গোয়েন্দা শাখা (ডিবি)পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মাহাবুবুর রহমান জানান, সম্প্রতি সিদ্দিরগঞ্জ পাঠানতলী এলাকায় র‌্যাবের সঙ্গে বন্ধুকযুদ্ধে নিহত শীর্ষ সন্ত্রাসী দেলোয়ার হোসেন ওরফে মাস্টার দেলুর সেকেন্ড ইন কমান্ড পিচ্চি দেলু ও তার দুই সহযোগী নিয়ে বৃহস্পতিবার রাত সোয়া ৯ টার দিকে বন্দরের মদনপুর বড় সাহেব বাড়ি সুরুজ মিয়ার টাওয়ার মিলের সামনে ডাকাতি করার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিল। এসময় ডিবি পুলিশের উপ পরিদর্শক শহিদুল ইসলাম, আসাদুজ্জামান, টুটুল মোল্লা, ও এএসআই বকুলের নেতৃত্বে একটি টিম অভিযান চালিয়ে শীর্ষ সন্ত্রাসী পিচ্চি দেলু ও মদনপুর এলাকার মৃত আব্দুল মতিন ভূঁইয়ার ছেলে সাকিল, একই এলাকার মৃত জসিমউদ্দিনের ছেলে শাহজালালকে আটক করে। পরে তাদের ডাকাতি কাজে ব্যবহৃত একটি সাদা রঙের প্রাইভেটকার (চট্র মেট্রা-গ-১১-৯৩৯৫) ও ছুরি, চাপাতিসহ দেশীয় দাড়ালো অস্ত্র এবং লুণ্ঠিত ১৮ হাজার ৭শত টাকা উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় ডিবি পুলিশের উপ পরিদর্শক শহিদুল ইসলাম বাদি হয়ে বন্দর থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। যাহার নং- ১৫-০৯-১৭ইং (৩২)। ধারা ৩৯৯/৪০২।
শীর্ষ সন্ত্রাসী পিচ্চি দেলুর বিরুদ্ধে বন্দর ও সিদ্দিরগঞ্জ থানায় ৩ টি হত্যা, অস্ত্র, ডাকাতিসহ এক ডজন মামলা রয়েছে।

স্থানীয় সূত্রে জানাগেছে, ২০০৩ সালে বন্দরের কবিলের মোড় এলাকায় পুলিশ দেলুকে অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার করে। এ মামলায় জেল হাজত থেকে জামিনে বেরিয়ে মাষ্টার দেলুর হাত ধরে অপরাধ জগতে দেলুর উত্থান। নিহত মাষ্টার দেলুর ছত্রছায়ায় ধীরে ধীরে দূর্ধর্ষ হয়ে উঠে দেলু। মাষ্টার দেলুর সেকেন্ড ইন কমান্ড হিসাবে তার অপরাধ কর্মকান্ড, অস্ত্র মাদক ব্যবসা নিয়ন্ত্রনে চলে যায় দেলুর হাতে। মাদক ব্যবসা নিয়ন্ত্রন ও একক আধিপত্য বিস্তার কে কেন্দ্র করে নিরব ও বাবু নামের দুইজনকে খুন করা হয়। একই ঘটনায় মাষ্টার দেলু ও পিচ্চি দেলু হত্যা করে শহরের কিল্লারপুল এলাকার হাবিবকে। পাঠানতলী এলাকা তাদের অপরাধের স্বর্গ রাজ্য হিসেবে পরিনত হয়ে উঠলে এলাকাবাসী অতিষ্ট হয়ে তাদের বিরুদ্ধে ফুসে উঠে সাধারণ মানুষ। এর পর থেকে নড়ে চড়ে বসেন প্রশাসন । মাষ্টার দেলু ও তার বাহিনীর সদস্যদের গ্রেপ্তার তৎপরতায় মরিয়া হয়ে উঠেন জেলার প্রশাসন। এর মধ্যে এলাকাবাসীর পক্ষে নেতৃত্বকারী সাংবাদিক মান্নানকে মাষ্টার দেলু ও তার সেকেন্ড ইন কমান্ড পিচ্চি দেলু তার বাহিনী প্রকাশ্যে কুপিয়ে জখম করে। এরপর নারায়ণগঞ্জ গোয়েন্দা শাখা (ডিবি) পুলিশ বন্দরের মদনপুর এলাকা ডাকাতির প্রস্ততিকালে পিচ্চি দেলুসহ ৫জনকে গ্রেপ্তার করেছিল। সম্প্রতি মাদক ব্যবসা নিয়ে শহরের তল্লা এলাকায় পুলিশ সোর্স নাসিরউদ্দিনকে গুলি করে আহত করে পিচ্চি দেলু । এ ঘটনায় মামলা করলে জীবনে মেরে ফেলার হুমকি দেয়ায় তার পরিবারের পক্ষ থেকে কোন প্রকার সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে মামলা করেনি। এ ঘটনায় জেলা প্রশাসনের মধ্যে ছড়িয়ে পড়লে দেলু নিজ এলাকা পাঠানতলী ছেড়ে অন্যত্রে গা ঢাকা দিয়ে বন্দরে অবস্থান নেয়। শাকিল মদনপুর ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি ও ওই ইউপির সাবেক সদস্য হওয়ায় সন্ত্রাসী পিচ্চি দেলু মদনপুর এলাকায় অবস্থান করে। এখান থেকে পিচ্চি দেলু বন্দরে বিভিন্ন স্পটে ইয়াবা সরবরাহ করতো। এ ছাড়াও সাকিল ভূঁইয়ার ছত্রছায়ায় নানা অপরাধ কর্মকান্ড করে আসছে দেলু। বৃহস্পতিবার রাতে সাকিলসহ পিচ্চি দেলুকে নিয়ে ডাকাতি প্রস্তুতি কালে ডিবি পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হন তারা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *