যে দ্বীপে নারীদের প্রবেশাধিকার নেই

ওকিনোশিমা দ্বীপটির আয়তন শূন্য দশমিক তিন বর্গমাইলেরও কম। জাপানিদের প্রধান তিনটি ধর্মীয় মঠের একটির অবস্থান এই দ্বীপে। এ কারণে দ্বীপটি জাপানিদের কাছে অত্যন্ত পবিত্র। দ্বীপটি জাপানের দক্ষিণ কিয়ুশু উপকূলে অবস্থিত। স্থানীয় মানুষের কাছে এটি পবিত্র দ্বীপ হিসেবে পরিচিত। এ দ্বীপটির সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য হলো এখানে কোনো নারী নেই। এমনকি নারীদের প্রবেশও নিষিদ্ধ সেখানে।

চতুর্থ শতাব্দীতে এখানে এসে জেলেরা তাদের নিরাপত্তার জন্য প্রার্থনা করত বলে জানা যায়। ধর্মযাজক ও মঠের কর্মচারীরাই শুধু এ দ্বীপে বসবাস করে। এই দ্বীপটিতে রয়েছে ঐতিহাসিক যুগের প্রচুর মূল্যবান শিল্পকর্ম। কোরিয়া উপদ্বীপ থেকে আবিষ্কৃত অন্তত ৮০ হাজার শিল্পকর্ম রয়েছে দ্বীপটিতে, যা জাপান সরকার জাতীয় সম্পদ হিসেবে ঘোষণা করেছে।

প্রাচীনকাল থেকেই এই দ্বীপে নারীদের প্রবেশ সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ। মঠের যাজকেরা দ্বীপটির দেখাশোনা করেন। স্থানীয় শিন্তো ধর্মগোষ্ঠীর বাসিন্দারা এই দ্বীপটিকে দেবতাদের বাসস্থান মনে করে। তাই তাদের কাছে দ্বীপটি পবিত্র জায়গা হিসেবে পরিচিত। দ্বীপে মহিলাদের প্রবেশ কেন নিষিদ্ধ হয়েছে তা নিয়ে স্পষ্ট কোনো তথ্য পাওয়া যায় না। তবে একটি মত প্রচলিত আছে। তা হলো মূল ভূখণ্ড থেকে দ্বীপে আসার পথটি বিপজ্জনক হওয়ায় অতীতে নারীদের সেখানে নেয়া হতো না।

শিন্তো ধর্মযাজকেরা ওকিনোশিমা দ্বীপটিকে নিয়ন্ত্রণ করে। সাধারণ মানুষের জন্য এ দ্বীপ ভ্রমণে কড়াকড়ি আরোপ করেছেন ধর্মযাজকেরা। প্রতি বছর মে মাসে এখানে মঠের বার্ষিক উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। সে সময় এই আইন কিছুটা শিথিল করা হলেও ধর্মহীন লোকদের জন্য দ্বীপে প্রবেশ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। দ্বীপ পরিদর্শনে আসা লোকদের জন্য দ্বীপের আইন এতই কঠোর যে, দ্বীপ থেকে একটি পাথর কিংবা গাছের পাতাও তারা নিতে পারে না। স্থানীয় বাসিন্দারাও এসব আইন মেনে চলে। ফলে দ্বীপটির প্রাকৃতিক পরিবেশ খুবই আকর্ষণীয়।

দ্বীপের মৎস্যজীবীদের নেতা তাদাহিকে নাকামুরা বলেন, ‘স্থানীয় মৎস্যজীবীরা প্রাচীন যুগ থেকেই দ্বীপটিকে গুরুত্বপূর্ণ মনে করে, যার ফলে তারাও সুরক্ষিত থাকে।’
জাপান সরকার ওকিনোশিমা দ্বীপটিকে ইউনেস্কোর বিশ্বঐতিহ্য হিসেবে তালিকাভুক্তির জন্য মনোনয়নের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ২০১৭ সালে জাপানের পক্ষ থেকে যে পাঁচটি স্থানকে ইউনেস্কোর বিশ্বঐতিহ্য তালিকার জন্য প্রস্তাব করা হবে, তার মধ্যে এটি অন্যতম।

তবে শিন্তো ধর্মযাজকেরা এখানে পর্যটকদের আগমন নিয়ে খুবই উদ্বিগ্ন। তারা এ ব্যাপারে সতর্ক প্রতিক্রিয়াও ব্যক্ত করেছেন। মুনাকাতার তিনটি শীর্ষ মঠের প্রধান যাজক তাকায়ুকি আশিজু বলেন, ‘ইউনেস্কোর ঐতিহ্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হলেও আমরা দ্বীপটিকে সাধারণ মানুষের জন্য খুলে দেবো না। যথাযথ কারণ ছাড়া সাধারণ মানুষের দেবতাদের কাছে আসা ঠিক নয়।’

জাপানে নারীদের প্রবেশ নিষিদ্ধ এমন ধর্মীয় জায়গা শুধু এটিই নয়। হনশু দ্বীপের ইয়োশিনো-কুমানো ন্যাশনাল পার্কের সানজো পর্বত নারীদের জন্য নিষিদ্ধ। সপ্তম শতাব্দী থেকে এ পর্বতটি বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের একটি তীর্থস্থান। এ রকম আরো কয়েকটি জনপ্রিয় ধর্মীয় স্থান রয়েছে, যেখানে নারীদের প্রবেশের নিষেধাজ্ঞা আছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

News Banglabd Design by
Website Mela