শেয়ারবাজারে ব্যাংকের বিনিয়োগ সুযোগ বাড়ল

শেয়ারবাজারে ব্যাংকের বিনিয়োগের সুযোগ বাড়ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের এক প্রজ্ঞাপনের ফলে নতুন করে এ সুযোগ তৈরি হতে যাচ্ছে।
বাংলাদেশ ব্যাংক গতকাল রোববার এক প্রজ্ঞাপনে বলেছে, বিভিন্ন সহযোগী বা সাবসিডিয়ারি প্রতিষ্ঠানে ব্যাংকগুলোর যে মূলধন বিনিয়োগ রয়েছে, সেটিকে আগামী জানুয়ারি থেকে আর শেয়ারবাজারে ব্যাংকের বিনিয়োগসীমা বা এক্সপোজার লিমিটের হিসাবে ধরা হবে না। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অফসাইট সুপারভিশন বিভাগ থেকে গতকাল এ-সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপনটি জারি করা হয়।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, সার্বিক অর্থনীতির বিকাশের স্বার্থে একটি গতিশীল পুঁজিবাজার তৈরিতে বাংলাদেশ ব্যাংক বিভিন্ন নীতিগত সমর্থন প্রদান অব্যাহত রেখেছে। এ অবস্থায় পুঁজিবাজারে তফসিলি ব্যাংকগুলোর বিনিয়োগের সর্বশেষ পরিস্থিতি বিবেচনায় আইনগত বাধ্যবাধকতা পালনে নীতিগত এ সমর্থন দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
শেয়ারবাজারে বিভিন্ন ব্যাংকের সহযোগী প্রতিষ্ঠান হিসেবে আলাদা ব্রোকারেজ হাউস ও মার্চেন্ট ব্যাংক রয়েছে। এসব ব্রোকারেজ হাউস ও মার্চেন্ট ব্যাংকে শেয়ারের বিপরীতে মূলধন জোগান দিয়েছে ব্যাংকগুলো। এত দিন এ মূলধন বিনিয়োগকে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের শেয়ারবাজারে বিনিয়োগসীমার হিসাবে ধরা হতো। কিন্তু আগামী জানুয়ারি থেকে আর সেটি হিসাবে ধরা হবে না।
ধরা যাক, ‘ক’ একটি তফসিলি ব্যাংক। ‘খ’ ও ‘গ’ নামে শেয়ারবাজারে তার সহযোগী প্রতিষ্ঠান হিসেবে আলাদা দুটি ব্রোকারেজ হাউস ও মার্চেন্ট ব্যাংক রয়েছে। এখন ধরা যাক, ‘খ’ ব্রোকারেজ হাউসে ‘ক’ ব্যাংকটির মূলধন বিনিয়োগ রয়েছে ২০০ কোটি টাকা। আর ‘গ’ মার্চেন্ট ব্যাংকে ‘ক’ ব্যাংকটির মূলধন বিনিয়োগ রয়েছে ১৫০ কোটি টাকা। অর্থাৎ ব্রোকারেজ হাউস ও মার্চেন্ট ব্যাংক মিলিয়ে ‘ক’ ব্যাংকটির মোট মূলধন বিনিয়োগ রয়েছে ৩৫০ কোটি টাকা।
এত দিন শেয়ারবাজারে ‘ক’ ব্যাংকটির বিনিয়োগসীমা হিসাবের ক্ষেত্রে এ ৩৫০ কোটি টাকাকে হিসাবে ধরা হতো। কিন্তু আগামী জানুয়ারি থেকে সেটিকে আর হিসাবে ধরা হবে না। এর ফলে ‘ক’ ব্যাংকটির জন্য পুঁজিবাজারে ৩৫০ কোটি টাকার বিনিয়োগের সুযোগ তৈরি হলো। যদি ব্যাংকটি নির্ধারিত বিনিয়োগসীমা অতিক্রম না করে থাকে।
বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, তফসিলি ব্যাংকগুলোর মধ্যে প্রায় অর্ধশতাধিক ব্যাংকের শেয়ারবাজার-সংশ্লিষ্ট সহযোগী প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানে ব্যাংকগুলোর মূলধন বিনিয়োগের পরিমাণ প্রায় সাড়ে ৫ হাজার কোটি টাকা। এ বিপুল পরিমাণ বিনিয়োগকে ব্যাংকের বিনিয়োগসীমার বাইরে রাখা হচ্ছে।
জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র শুভঙ্কর সাহা প্রথম আলোকে বলেন, এর আগেও শেয়ারবাজারে ব্যাংকের বিনিয়োগ বৃদ্ধির জন্য সুযোগ বাড়ানো হয়েছিল। তাতে বিশেষ কোনো উদ্দেশ্যে গঠিত, বিকল্প বিনিয়োগ বা সমজাতীয় কোনো তহবিলে কোনো তফসিলি ব্যাংকের ২০০ কোটি টাকা পর্যন্ত বিনিয়োগকে ব্যাংকের বিনিয়োগসীমার বাইরে রাখার নির্দেশনা দেওয়া হয়। এখন নতুন করে সহযোগী প্রতিষ্ঠানের মূলধন বিনিয়োগকে ব্যাংকের বিনিয়োগসীমার বাইরে রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এর ফলে পুঁজিবাজারে ব্যাংকের বিনিয়োগের সুযোগ তৈরি হবে। পুঁজিবাজারের উন্নয়নে নীতি সহায়তার অংশ হিসেবে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের এমন উদ্যোগের বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) সাবেক সভাপতি ও বর্তমান পরিচালক শাকিল রিজভী বলেন, এ সিদ্ধান্তের ফলে পুঁজিবাজারে ব্যাংকের বিনিয়োগের সক্ষমতা বাড়বে। ব্যাংক কতটা বিনিয়োগ করবে, সেটি একান্তই তাদের নিজস্ব বিষয়। তবে ব্যাংকের বিনিয়োগসীমা নিয়ে এত দিন ধরে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের মধ্যে যে আতঙ্ক বিরাজ করছিল, সেটির নিরসন হবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সিদ্ধান্তের ফলে পুঁজিবাজারে ব্যাংকের অতিরিক্ত বিনিয়োগসীমা সমন্বয়ের ক্ষেত্রেও কিছুটা বাড়তি সুবিধা পেল ব্যাংকগুলো। এতে করে বিক্রির চাপ কমে যাবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

News Banglabd Design by
Website Mela