শেয়ার কিনতে সঞ্চয় করুন মাসে মাসে
মাসিক সঞ্চয়ের কথা ভাবছেন? কিন্তু ব্যাংকে সুদের হার কম, তাই আগ্রহ পাচ্ছেন না। বাড়তি মুনাফার আশায় হয়তো সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগের কথা ভাবছেন। কিন্তু সেখানে মাসিক কিস্তিতে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র সঞ্চয়ের সুযোগ নেই। তাহলে কি অলস ফেলে রাখবেন টাকা। বিকল্প বিনিয়োগ হিসেবে শেয়ারবাজারের কথা ভাবতে পারেন। কিন্তু তাতেও হয়তো সাহস পাচ্ছেন না। শেয়ারবাজারে বিনিয়োগের জন্য যে ধরনের জ্ঞান, ধৈর্য ও কৌশল জানা দরকার সেটিও আপনার নেই। সব মিলিয়ে আপনার জন্য মাসিক কিস্তিতে ক্ষুদ্র সঞ্চয়ের খুব বেশি পথ খোলা নেই।
এ অবস্থায় শেয়ারবাজারে ‘মাসিক বিনিয়োগ প্রকল্প’ নামে নতুন একটি পণ্য চালু করেছে মার্চেন্ট ব্যাংক আইডিএলসি ইনভেস্টমেন্টস। ৫ থেকে ১০ বছর মেয়াদি এই সঞ্চয় প্রকল্পে প্রতি মাসে আপনি সর্বনিম্ন তিন হাজার টাকা করে জমাতে পারেন। এর বাইরে কেউ বেশি অর্থ জমা করতে চাইলে সেটিও সম্ভব। আর মাসিক সেই সঞ্চয়কে শেয়ারবাজারে খাটিয়ে মুনাফা তুলে নেওয়ার কাজটি করবে আইডিএলসি।
ভাবছেন সেটি কীভাবে? তাহলে আইডিএলসি ইনভেস্টমেন্টসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ মনিরুজ্জামানের বক্তব্য থেকেই জেনে নিন এ বিষয়ে বিস্তারিত। তিনি বলেন, ‘যেকোনো বিনিয়োগকারীকে নির্ধারিত ফরম পূরণ করে আমাদের গ্রাহক হতে হবে। কত টাকা কত বছর মেয়াদে মাসিক কিস্তির মাধ্যমে জমা করতে চান সেটি নিশ্চিত করা হবে। গ্রাহকের ব্যাংক হিসাব থেকে আমরা নিজেরা ওই অর্থ সংগ্রহ করব। প্রতি মাসের কিস্তির টাকা শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত ব্লুচিপস বা সর্বাধিক মৌল ভিত্তিসম্পন্ন কোম্পানির শেয়ারে বিনিয়োগ করা হবে।’
শেয়ারবাজারের টালমাটাল অবস্থায় ভালো কোম্পানির শেয়ারে বিনিয়োগ করে মুনাফা নিশ্চিত হওয়া সম্ভব কি না এমন প্রশ্নের জবাবে মনিরুজ্জামান বলেন, ‘২০০৭ সাল থেকে আমরা তালিকাভুক্ত ব্লুচিপস কোম্পানিগুলোর বিভিন্ন ধরনের পারফরম্যান্স বিশ্লেষণ করে এ ধরনের একটি মাসিক সঞ্চয় প্রকল্প চালুর উদ্যোগ নিয়েছি। আমাদের বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ব্লুচিপস কোম্পানিগুলোতে দীর্ঘ মেয়াদে বিনিয়োগ করে ন্যূনতম ১৫ থেকে ২০ শতাংশ হারে মুনাফা পাওয়া সম্ভব খারাপ বাজারেও। এমনও তথ্য পাওয়া গেছে, ২০০৭ সালে তালিকাভুক্ত একটি ব্লুচিপস কোম্পানির শেয়ারে কেউ এক লাখ টাকা প্রাথমিক বিনিয়োগ এবং বছর বছর প্রাপ্ত লভ্যাংশ ওই কোম্পানির শেয়ারে পুনর্বিনিয়োগ করে থাকেন, তাহলে ২০১৫ সালে সেই বিনিয়োগ ৬৬ গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। এ রকম আরও কিছু কোম্পানির শেয়ারে ১২ গুণ থেকে ১৯ গুণ পর্যন্ত রিটার্ন এসেছে।’
বিনিয়োগকারীর কাছ থেকে টাকা নিয়ে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করে প্রতিষ্ঠান হিসেবে আইডিএলসির লাভ কী? জানতে চাইলে প্রতিষ্ঠানটির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, এ ধরনের হিসাব খোলার শুরুতেই গ্রাহকের কাছ থেকে ৫০০ টাকা ফি বা মাশুল নেওয়া হবে। এর বাইরে বছর শেষে ৩ শতাংশ হারে ব্যবস্থাপনা মাশুল নেবে আইডিএলসি। আর লেনদেনের জন্য নির্ধারিত যে মাশুল রয়েছে সেটিও বিনিয়োগকারীর কাছ থেকে নেওয়া হবে। আর নির্ধারিত মেয়াদ শেষে ওই সঞ্চয় হিসাবে যে পরিমাণ মুনাফা হবে তার পুরোটাই পাবেন সঞ্চয়কারী। তবে কেউ যদি নির্ধারিত মেয়াদের আগে বিনিয়োগ তুলে নিতে চান সে ক্ষেত্রে নির্ধারিত হারে একটি মাশুল কেটে নেওয়া হবে।
মাসিক কিস্তিতে সঞ্চয়ের মাধ্যমে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগের এ ধরনের প্রকল্প বাংলাদেশের বাজারে এটিই প্রথম। তবে ভারতসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে মার্চেন্ট ব্যাংকগুলোতে এ ধরনের সঞ্চয় প্রকল্প রয়েছে।
মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান বলেন, কিছু প্রতিবন্ধকতার কারণে এত দিন বাংলাদেশের শেয়ারবাজারে এ ধরনের পণ্য বা প্রকল্প চালু করা সম্ভব হয়নি।
আইডিএলসি সংশ্লিষ্টরা জানান, আনুষ্ঠানিকভাবে এখনো এই মাসিক সঞ্চয় প্রকল্পটি চালু করা হয়নি। সীমিত পর্যায়ে এটির প্রচারণা শুরু হয়েছে। তাতেই গ্রাহকদের ব্যাপক আগ্রহ লক্ষ করা যাচ্ছে।